অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজ শুরু হবে বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় ম্যাচ। অথচ টিভিতে খেলা সম্প্রচার নিয়ে জটিলতার নিরসন হয়নি এখনও। আইসিসি চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সঙ্গে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সিরিজও রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ এই সফরের টিভি সম্প্রচার স্বত্ব পায়নি বাংলাদেশি কোনো টিভি চ্যানেল।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড থেকে সম্প্রচার স্বত্ব কিনেছে টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিং (টিএসএম) নামের একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। শেষ দুই বছরে বাংলাদেশের খেলাগুলো টিভিতে দেখাচ্ছে টি স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন। দুই চ্যানেলেই বক্তব্য, টিএসএম থেকে এবার টিভিতে খেলা দেখানো নিয়ে কোনো প্রস্তাব তারা পায়নি।
অথচ টিএসএমের স্বত্বাধিকারী মইনুল ইসলামের দাবি, ‘যারা ক্লায়েন্ট আছে তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ওনারা যে কিছু একটা প্রস্তাব করবেন সেই ব্যবস্থাও নেই। দাম বলারই সাহস হচ্ছে না, সমোঝোতা পরের কথা।’
বাংলাদেশের খেলা হলে টিভিতে বিজ্ঞাপনদাতার ঘাটতি থাকে না। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে বলে ধারণা টিএসএমের এই কর্তার, ‘এটা বৈশ্বিক সংকট। মানুষ খেতে পারছে না। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত সবাই ভুক্তভোগী। যেখানে মানুষের জীবিকা নির্বাহ করাটা কষ্টকর হয়ে যায়, তখন খেলাটা মুখ্য হয় না।’
খেলা শুরু হতে যখন ৪৮ ঘণ্টাও নেই, তখন টিভিগুলো কী ভাবছে? জানতে চাওয়া হলে টি স্পোর্টসের ইনপুট এডিটর আহমেদ রাকিব বলেছেন, ‘আমাদের তরফ থেকে ভালো কোনো খবর নেই। আমরা এবার খেলা দেখাচ্ছি না।’
এছাড়া গাজী টেলিভিশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের বক্তব্য, ‘২০২০ থেকে আমরা সরাসরি টিভি সম্প্রচার স্বত্ব কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। আমরা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে টিভি স্বত্ব কিনছি। সেখান থেকে কিনেই আমরা আমাদের চ্যানেলে দেখাচ্ছি। আমরা সব সময়ই খেলা দেখানোর জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এবার আমাদের কাছে কোনো প্রস্তাব আসেনি।’
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলও শেষ কয়েক বছরে খেলা দেখাচ্ছে। কিন্তু এবার তারাও এই সিরিজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে, এর পেছনে বড় কারণ টিএসএমের সঙ্গে টিভিগুলোর পুরোনো ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। এজন্য কেউই এগিয়ে এসে বিষয়টি সমাধান করতে চাইছে না।
টিভি সম্প্রচার নিয়ে গভীরভাবে কাজ করা ক্রীড়া সাংবাদিক সাকের রুবেন ধারণা দিলেন, এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ১০-১৫ মিলিয়ন ডলারের আশেপাশে বিক্রি হয়। টিএসএমের দাবি, এবার ৪০ শতাংশ কম প্রাইজে টিভি স্বত্ব বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও এ দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি কারও কাছ থেকেই।
শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, টিএসএম জিম্বাবুয়ে সফরেও টিভি স্বত্ব কিনেছে। বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর জিম্বাবুয়েতেও সফর করবে। সেখানেও একই জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তা আগাম ধারণা দিয়ে রাখলেন সাকের রুবেন।
এদিকে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের প্রেজেন্টেড স্পন্সর ও টি-টোয়েন্টির পাওয়ার স্পন্সর কিনেছে ওয়ালটন গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবিউল ইসলাম মিলটন বলেছেন, ‘মার্কেটিংয়ের একটি বড় বক্তব্য আছে, সেটা হল- প্রচারেই প্রসার। ক্রিকেট স্পন্সরের আসল উদ্দেশ্যই হলো প্রচার।
দেশের ১০ থেকে ১২ কোটি ক্রিকেট প্রিয় মানুষ টিভিতে খেলা দেখে বলেই কিন্তু এই ইভেন্ট আমাদের দেশে এত জনপ্রিয় এবং স্পন্সর ভ্যালুও অন্য ইভেন্ট থেকে অনেক বেশি। তাই খেলা যদি টিভিতে না দেখানো হয়, প্রচার না হয় তাহলে স্পন্সর হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কোন লাভ নেই।’ তার মতে, টিভিতে খেলা দেখানো না হলে ক্রিকেটপ্রেমীরাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবেন।
অতীতে বাংলাদেশের দর্শকরা কেবল দুবারই এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সিরিজ (যে সিরিজে মোহাম্মদ আশরাফুল সেঞ্চুরি করেছিলেন) এবং পাকিস্তান-বাংলাদেশের এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ দেখা যায়নি কোথাও।