টার্গেটটা বেশ বড়,ইনিংসের প্রথমেই আউট হয়েছেন ওপেনার। ৩ নম্বরে নামা তাওহীদ তার তান্ডব শুরু করলেন ৬ দিয়ে,এরপর ২ চার,এক ডট,আবার ২ চার! হাসান মাহমুদের ঐ এক ওভারেই ২২ রান তুলেন নেন তাওহীদ হৃদয়। হৃদয়ের হৃদয় জুড়ানো ব্যাটিং যে শুধু এই ইনিংসটি তা কিন্তু নয়।এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ এই রান সংগ্রাহক গত বিপিএলেও চারশো এর বেশি রান করেছেন।এরপর ন্যাশনালে মাতিয়েছেন,লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগেও নাম করেছেন।তবে বিশ্বকাপটা ভাল না গেলেও কুমিল্লার জার্সিতে ইতোমধ্যে অর্ধশতক কিংবা শতকে রাঙাচ্ছেন,আছে নব্বই করা ইনিংসও।অনেক দেশেই এখন তরুনরা হাইলাইট হয়,বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনা আপে হয়তো এই একটি তরুনই আছেন!
অথচ গল্পটা এতোটা সহজ ছিলো না, বারবার খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন হৃদয়। অভাবের সংসার,সেখানে হৃদয়ের ছিলো অগ্রহণযোগ্য আবদার।ভর্তি হবেন একাডেমিতে,তবে তাতে বাবার মন গলেনি,কিন্তু মন ঠিকই গলেছে মায়ের!গ্রামের জমি বন্দক রেখে টাকা দেন হৃদয়ের মা! গ্রামের জমি বন্ধক রেখে যে টাকাটা দিয়েছিলেন , বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এসে দেখলেন সেখানে কোনো একাডেমির অস্তিত্বই নেই। সব টাকাই খুইয়ে ফেলেন প্রতারকের খপ্পরে পরে, তখন মনোবল আর কীভাবে শক্ত থাকে। এক পর্যায়ে ক্রিকেট ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি নজরে পড়েন খালেদ মাহমুদ সুজনের। এরপর বয়সভিত্তিক দল। এরপর নানা পথ পেরিয়ে জাতীয় দলে।
আর জাতীয় দলে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই পেয়েছেন সেরার পুরষ্কার। খেলেন ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তবে জাতীয় দলের ঐ দৌড়টা থমকে দাঁড়ায় ওয়ানডে বিশ্বকাপে।এরপর নিজেকে খুজতে বেশি সময় নেয়নি হ্রদয়।গতবছর ৪০৩ রান করা তাওহীদ এবার ইতোমধ্যে করেছেন ৪৪৭ রান! টুর্নামেন্টে সেরাতো বটেই পাশাপাশি স্ট্রাইক রেটও নজড় কাড়া। ৪০ এভারেজ,১৪৯ স্ট্রাইক রেট,৪৪৭ রান। ১ টা শতক ২ টি অর্ধশতক।বাংলাদেশের মাটিতে এমন পরিসংখ্যানই বলে দেয় হৃদয়কে নিয়ে আলোচনা করা বাড়াবাড়ি না! বিশেষ করে গতকাল যখন কুমিল্লার শক্তিমত্তা বিশ্লেষনে বারবার নাম নেওয়া হচ্ছিলো রাসেল-চার্লস মইনদের,তখন আসল পাওয়ার হিটিংটা দেখালেন দেশী বয় তাওহীদ হৃদয়ই! শুধু ফ্রাঞ্চাইজি নয়,হৃদয়ের এই হৃদয় জোড়ানো পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকবে কয়েক মাস পর অনুষ্টিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপেও,এমনটাই প্রত্যাশা।