২০১৭ সালে চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক কাম কোচ ইসলাম রকিবের হাত ধরে ঢাকার বিকেএসপিতে মাসব্যাপী ক্রিকেট প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে পড়ালেখার চাপ সামলাতে বেশ কিছুদিন সব ধরণের খেলার বাইরে চলে যান বিদিশা। এরপরই খেয়ালী মনের স্বপ্ন ডানায় ভর করে ফুটবল খেলতে বাসনা জাগে তার। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলায় থেকে প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে মাহতাব বিশ্বাস ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন করতে চলে যান বিদিশা। সেখানে ফুটবল গুরু মিলন বিশ্বাসের হাত ধরে শুরু করেন নতুন উদ্যোমে ফুটবল প্রশিক্ষণ।
তার জীবনের সেরা সুযোগটি চলে আসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অনুর্ধ-১৭ জাতীয় ফুটবল টুর্ণামেন্টে খেলতে গিয়ে। এ টুর্নামেন্টে চুয়াডাঙ্গা আন্তঃ উপজেলা, জেলা ও খুলনা বিভাগের খেলায় নিজেকে উজ্বলভাবে মেলে ধরেন বিদিশা। খুলনা বিভাগের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ লাভ করেন বিদিশা। ঢাকার বিকেএসপিতে সারা বাংলাদেশ থেকে ২৫জন প্রমিলা ফুটবলারকে ডাকা হয় মাসব্যাপী উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য। সেখানে নিবীড় প্রশিক্ষণ শেষে ১৫জন প্রমিলা ফুটবলারকে বাছাই করা হয়। এ ১৫ জনের মধ্য থেকে আবার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বেস্ট ইলেভেন বাছাই করা হয়।
যারা চলতি বছরের জুলাই মাসে দুই মাসব্যাপী ইউরোপের দেশ পর্তুগালে উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করবে। সেই বেস্ট ইলেভেনে চুয়াডাঙ্গার মেয়ে বিদিশা রাণী বেদের অবস্থান ৮ নস্বরে। পর্তুগালে উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করেছেন বিদিশা রাণী। আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও পর্তুগাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিফার ব্যবস্থাপনায় ২ মাসের উন্নত ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য বিদিশা ইউরোপের দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ লাভ করেছেন।
পাঁচ বোনের মধ্যে বিদিশা রানী দ্বিতীয়। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহরের স্টেশনপাড়ার রাজ কুমার বেদ ও মা ডলি রানী বেদ গৃহিনী মেয়ে। বাবা আলমডাঙ্গার হারদীর এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করেন।
বিদিশার বাবা রাজকুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার শত অভাব থাকলেও আমি আমার মেয়েদেরকে পড়াশোনা ও খেলাধুলার অবাধ সুযোগ করে দিয়েছি। ভগবান ও আমার মুখের দিকে চেয়েছেন। আমার মেয়ে ইউরোপে যাচ্ছে ফুটবল খেলতে। এমন সৌভাগ্য ক’জনের হয়। আমি আজ নিজেকে খুব গর্বিত পিতা মনে করছি।’
বিদিশা বলেন, ‘আমি কখনো ভাবতেও পারিনি পর্তুগাল যাবো। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার মতো একজন হতদরিদ্রের মেয়ে আজ ফুটবলের সেরা উপহারটি নিয়ে স্বপ্নের দেশ ইউরোপের পর্তুগালে প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছি। তবে আমি চাই সেখান থেকে দেশে ফিরে দেশ ও জাতীর জন্য আমার সেরা খেলাটি উপহার দিতে। আজ আমার এই অবস্থানের জন্য নাইটিঙ্গেলসহ আমার শিক্ষকদের কাছে চির কৃতজ্ঞ।’