প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা দুই জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর অজিদের কাছেও ৬২ রানে হারলো পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ৩৬৭ রানের পাহাড়সম স্কোরবোর্ড দাঁড় করায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ৩০৫ রানে।
৩৬৮ রানের লক্ষ্যে নামে প্রথম ৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪০ রান করে পাকিস্তানের দুই ওপেনার। প্রথম পাওয়ার-প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাবর আজমের দলের স্কোর দাঁড়ায় ৫৯ রান। এরপর চড়াও হয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল পাকিস্তানের। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে প্যাট কামিন্সকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে তুলে মারেন শফিক। সীমানার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা শন অ্যাবট বল ধরলেও তা হাত ফসকে হয়ে যায় ছক্কা। এটাই পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ছক্কা। শফিক আউট হলে ৬৬ রানেই ভেঙে যেতে পারত পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। পাকিস্তানি ওপেনারের স্কোর তখন ২৭ রান।
অ্যাবটের ক্যাচ মিস হতে না হতেই আরেকটি ক্যাচ মিস করে অস্ট্রেলিয়া। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পুল করতে যান ইমাম। মিড উইকেটে ক্যাচ মিস করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ক্যাচ মিসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেই ওভারের ফিফটি করেন ইমাম। ওভারের পঞ্চম বলে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে ২০তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন ইমাম।
ফিফটির পর দুই ওপেনার ইমাম,শফিক দুজনেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। ২০তম ওভার থেকে পাকিস্তান নিয়েছে ১৩ রান। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের এই ওভারে শফিক দুটি ও ইমাম একটি চার মেরেছেন। নিয়মিত বোলারদের দিয়ে যখন উইকেট তোলা যাচ্ছে না, তখন কামিন্স বোলিংয়ে নিয়ে এলেন মার্কাস স্টয়নিসকে। স্টয়নিস এসে নিজের প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছেন। ২২তম ওভারের প্রথম বলে স্টয়নিসকে তুলে মারতে যান শফিক। মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ধরেছেন ম্যাক্সওয়েল। ৬১ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করেন শফিক। উদ্বোধনী জুটিতে শফিক-ইমাম ১২৭ বলে ১৩৪ রান যোগ করেছেন।
শফিকের পর দ্রুত ইমামের উইকেটও তুলে নিয়েছেন স্টয়নিস। ২৪তম ওভারের চতুর্থ বলে স্টয়নিসকে কাট করতে যান ইমাম। টপ এজ হওয়া বল থার্ড ম্যান বাউন্ডারিতে লুফে নেন মিচেল স্টার্ক। ১০ চারে পাকিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটার করেছেন ৭১ বলে ৭০ রান। তাতে পাকিস্তানের স্কোর হয় ২৩.৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৪ রান। তিন নম্বরে নামা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম দারুণ ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েছিলেন। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাম্পাকে পুল করতে যান বাবর। শর্ট মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন কামিন্স। ১৪ বলে ১৮ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
শফিক, ইমাম, বাবরের বিদায়ে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ২৬.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭৫ রান। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া পাকিস্তানের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সৌদ শাকিল। চতুর্থ উইকেটে ৪৮ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন রিজওয়ান ও শাকিল। এই জুটি ভাঙতে স্টয়নিস অবদান রেখেছেন ফিল্ডার হিসেবে। ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কামিন্সকে পুল করতে যান শাকিল। টপ এজ হওয়া বল কাভার থেকে উল্টোদিকে দৌড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন স্টয়নিস। ৩১ বলে ৫ চারে ৩০ রান করেন শাকিল। তাতে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৩৪.২ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩২ রান।
চার উইকেট পড়ার পর উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন ইফতিখার আহমেদ। বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে পাল্লা দিয়ে এগোতে থাকেন রিজওয়ান-ইফতিখার। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি জাম্পা। ৩৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ইফতিখারের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদন করেন জাম্পা। বল ব্যাটে লেগেছে কি না এই দ্বন্দ্বে মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। এরপর রিভিউ নিয়ে উইকেটটি নেয় অস্ট্রেলিয়া। তাতে ভেঙে যায় পঞ্চম উইকেটে রিজওয়ান ও ইফতিখারের ২৭ বলে ৩৭ রানের জুটি। ২০ বলে ৩ ছক্কায় ২৬ রানের ছোটো ক্যামিও ইনিংস খেলেন ইফতিখার।
ইফতিখারকে বিদায় করার পর দ্রুত রিজওয়ানের উইকেটও তুলে নেন জাম্পা। ৪১তম ওভারের পঞ্চম বলে রিজওয়ানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন জাম্পা। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৪০ বলে ৫ চারে ৪৬ রান করেন রিজওয়ান। ইফতিখার, রিজওয়ানের বিদায়ের পর পাকিস্তানের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যায়। বাবরদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন কামিন্স। ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে মারনাস লাবুশেনের তালুবন্দী হয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৩৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ৩০৫ রানে। পাকিস্তানের ইনিংসের সর্বোচ্চ ৭০ রান করেন ইমাম। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন জাম্পা। ম্যাচসেরা হয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার। ১০ রানে জীবন পেয়ে করেন ১৬৩ রান। ১২৪ বলের ইনিংসে ১৪ চার ও ৯ ছক্কা মেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি ব্যাটার।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। পাকিস্তানের ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতের সুযোগ নিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
ব্যক্তিগত ১০ রানে শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে মিড অনে ওয়ার্নারের সহজ ক্যাচ ছাড়েন উসামা মীর। এরপর থেকে ওয়ার্নার এবং মিচেল মার্শ পাক বোলারদের ওপর তান্ডব চালান।
ম্যাচের ৩৪তম ওভারে প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন মার্শ। স্কোরবোর্ডে ততক্ষণে রানসংখ্যা ২৫৯। তিনে নেমে ম্যাক্সওয়েল ফিরেছেন প্রথম বলেই।
অস্ট্রেলিয়ার শেষের দিকের ব্যাটাররা এদিন সবাই নিষ্প্রভ ছিলেন। না হলে অজিদের রান আরও বেশি হতে পারতো।
১৪ টি চার আর ৯ ছক্কায় ১২৪ বলে ১৬৩ রান করেন ওয়ার্নার। যা এবারের বিশ্বকাপ আসরে এখনো পর্যন্ত ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। ১০৮ বলে ১২১ রন করেন মার্শ। সবমিলিয়ে ৫০ ওভারে ৩৬৭ রানে থামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
পাকিস্তানের পক্ষে শাহিন আফ্রিদি পাঁচটি উইকেট লাভ করেন।