আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশ। এদিন আগে বোলিং করে আফগানিস্তানকে মাত্র ১৫৬ রানে অলআউট করে টাইগাররা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের ৩৫তম ওভারেই জয় ছিনিয়ে নেয় সাকিব বাহিনী।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় যদিও শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়েছিলো বাংলাদেশ। দলীয় ১৯ রানে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে কাটা পড়েন তানজিদ তামিম ৫(১৩)। ব্যক্তিগত ১৩ রানে ফজল হক ফারুকীর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাশ। ফলে মাত্র ২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে দলকে নিরাপদে এগিয়ে নিয়ে যান মেহেদী মিরাজ ও নাজমুল শান্ত। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে গড়েন ৯৭ রানের জুটি। অর্ধশত পূর্ণ করে দলীয় ১২৪ রানে আউট হন মিরাজ ৫৭(৭৩)। অধিনায়ক সাকিব করেন ১৪ রান। তবে ৩ চার আর ১ ছয়ে ৮৩ বলে ৫৯ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত।
এর আগে টসো হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানস্তানের রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ ওপেনিং জুটি ভয় দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। তবে সময় যত গড়িয়েছে, তত ইনিংসের লাগাম নিজেদের দিকে টেনেছে বাংলাদেশ। ৪৭ রানের ওপেনিং জুটি ও ৮৩ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানিস্তান পরে অলআউট হয়েছে মাত্র ১৫৬ রানে।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে ধর্মশালায় আফগানিস্তান এদিন টিকতে পেরেছে মাত্র ৩৭ ওভার ২ বল। যার বেশিরভাগ কৃতিত্ব দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের। দুর্দান্ত ইকোনমি রেখে দুজনে মিলে তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
৪৭ রানের মাথায় এদিন নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দলীয় নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইব্রাহিমকে ফেরান তিনি। সাকিবের আউটসাইড অফের ডেলিভারি সুইপ করতে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। তবে বল টপ এজ হয়ে চলে যায় ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চলে। তালুবন্দী করতে কোনো ভুল করেননি তরুণ ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিম। প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করে আফগানিস্তান।
দ্বিতীয় উইকেট রহমত শাহকে নিয়ে ভালোই আগাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ। তবে ৮৩ রানের মাথায় আবারও সাকিবের আঘাত। সেই একই টপ এজ হয়ে ফেরেন রহমত। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিও। ২৫তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১১২ রানের মাথায় মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তাওহীদ হৃদয়কে ক্যাচ দেন তিনি। তবে বাংলাদেশ তাদের কাঙ্খিত উইকেট পায় তার পরের ওভারে। মোস্তাফিজের বলে তানজিদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহমানুল্লাহ। ৬২ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রান করেন তিনি।
৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া আফগানদের এরপর আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ১২২ রানের মাথায় নাজিবুল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট পূরণ করেন সাকিব। রশিদ খান যখন উইকেটে সেট হয়ে যাচ্ছিলেন তখনই আবার মিরাজের আঘাত। সরাসরি বোল্ড করেন রশিদকে। দলের সঙ্গে আর ৬ রান যোগ করতেই দারুণ গতিতে রান তুলতে থাকা আজমাতুল্লাহ ওমারজাইকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ১৫৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা আফগানরা আর কোনো রানই করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৭৬ বল বাকি থাকতেই ১৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানরা।
৮ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব। রান দেয়ার ক্ষেত্রে সাকিবের চেয়েও কৃপণ ছিলেন মিরাজ। ৯ ওভারে ৩ মেডেনসহ মাত্র ২৫ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন মূল্যবান ৩ উইকেট। ২টি উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট পেয়েছেন বাকি দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
এই জয়ে পূর্ণ ২ পয়েন্ট (নেট রানরেট +১.৪৩৮) নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।
আগামী ১০ই অক্টোবর একই মাঠে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।