দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেগুলো পক্ষে-বিপক্ষে গেল কি না সেই হিসাব করার সময়ও থাকে না। তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে হয়। বিসিবি ও সাকিব আজ যে মোড়ে দাঁড়িয়ে সেগুলো দীর্ঘদিনের গা ছাড়া মনোভাবের ফল।
বিসিবির এক পরিচালক খুব আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে অফিসিয়াল ফটোসেশনের কথা মনে আছে? সব ক্রিকেটার আছে, সাকিব নেই। অথচ মাঠ থেকে বেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। তাকে সেদিন ফিরিয়ে এনে ছবি তুলতে বসানো দরকার ছিল। পাপন ভাই উদার বলেই এসব কিছু মনে করেন না…।’ এরকম আরো উদাহরণ বিসিবির এই পরিচালক দিয়েছিলেন যেগুলো বোর্ডের জন্য বিব্রতকর, লজ্জার এবং আক্ষেপের।
সাকিবের জন্য বিসিবি বরাবরই ছাড় দিয়েছিল, ছিল সম্মান। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান বাদে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন খুব কম পরিচালকই। সবচেয়ে বড় কথা, তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শব্দের বাইরে কেউই কোনো কথা বলতেন না। কিন্তু ‘ধৈর্যের বাধ ভাঙা’ সাকিবকে এখন এমন কিছু শুনতে হচ্ছে যেগুলোর জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ। হয়তো সাকিব নিজেও নয়।
ঢাকা লিগে গতবার আবাহনী ও মোহামেডানের এক ম্যাচে সাকিব ও খালেদ মাহমুদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। দুজন দুজনের দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন। পরে সাকিব নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়ে আসেন। এরপর দুজনের পথ মিলিয়ে দেয় সবশেষ বিপিএল। সাকিব-সুজন একই জার্সিতে। এরপর জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমও তারা ভাগাভাগি করলেন। অথচ পরিস্থিতি আজ এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে যেখানে খালেদ মাহমুদ সাফ জানিয়ে দেন, ‘সাকিব খেলতে না চাইলে খেলবে না। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। ওকে ছাড়াই তো আমরা নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জিতেছি। আই ডোন্ট কেয়ার।’
তিনি নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সাকিব বিসিবির এমপ্লয়ি। চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার। বিসিবি চাইলে খেলতে বাধ্য। কিন্তু এভাবে ছুটি লাগবে, বিরতি লাগবে বলে কয়েকদিন পরপর হেনস্থা করতে পারে না। যথেষ্ট হয়েছে, সব কিছুরই একটা শেষ আছে।’ ইনজুরি ছাড়া নানা কারণে সাকিব বেশ কয়েকবারই জাতীয় দলের সিরিজ চলাকালে ছুটি কাটিয়েছেন। দেশের খেলা বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ছুটি চাইছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকার কারণ জানিয়ে। অথচ একই সময়ে আইপিএলে খেলার জন্য তিনি আগাম ছুটিও চেয়ে রেখেছিলেন। দল না পাওয়ায় তার খেলা হচ্ছে না। দল পেলে কী করতেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন নাজমুল হাসান, খালেদ মাহমুদও।
সব মিলিয়ে সাকিবের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোর্ডও হাঁপিয়ে উঠেছে। তার এই আসা-যাওয়ার কারণে নতুন খেলোয়াড় তৈরি করতে পারছে না এমন অভিযোগও করেছেন খালেদ মাহমুদ। সেজন্য কঠোর হচ্ছে বিসিবি। খালেদ মাহমুদ বললেন, ‘সাকিবকে ছাড়াই দল করছি এখন। তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। কিন্তু তারা না খেললে যে দেশের ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবে তা না। জোর করে তো কাউকে খেলানো যাবে না। তাদের জায়গায় অন্য যারা সুযোগ পাবে তাদের জন্য বড় সুযোগ হবে।’
শোনা যাচ্ছে, ভেতরে ভেতরে দল পরিবর্তন নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। সাকিবকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া যাচ্ছে না ধরে নিয়ে মোহাম্মদ মিঠুনকে নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এছাড়া সামনের সিরিজগুলোতে সাকিব থাকবেন কি থাকবেন না তা আগের থেকে জেনে নেবে বিসিবি। এসব ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ, টিম ম্যানেজমেন্ট ও টিম ডিরেক্টরকে সামলে নেওয়ার কথাও বলেছেন নাজমুল হাসান। ক্রিকেটারদের ছুটি-ছাঁটার বিষয় থেকে দূরে থাকতে চাইছেন তিনি।
এসব অপেশাদার আচরণে বারবার বিপদে পড়া বিসিবি তাদের থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় আছে, ‘ওদের পেছনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুঁজিটা অনেক। আমরা তো ওদের কাছে তার প্রতিদানটা চাইতেই পারি। এটা তো কারো ব্যক্তিগত দল না, এটা বাংলাদেশ দল। ওদের এই জার্সি পরে আনন্দে থাকা উচিত।