একটা চেঞ্জ,একটা ফরমেশনের বদল,বদলে দিলো ব্রাজিলকে,
কেন দিনিজের আমলে শক্তিশালী ব্রাজিল হেরেছে,আর ডরিভালের আমলে দুর্বল দল নিয়েও জিতেছে? কি এমন ছিলো?ডরিভাল কি জাদু দেখিয়েছিলেন?
দিনিজের আমলে যে ব্রাজিল ধ্বংসের পথে এগোচ্ছিলো,তুলনামূলক অনেক কম শক্তির সেই দল নিয়েও ডরিভাল কিভাবে ভালো ফলাফল করলো? একটা চেঞ্জই কি বদলে দিলো ডরিভালের ফলাফল?
নাকি একটা চেঞ্জ গোটা একটা ফরমেশন চেঞ্জ করে দিয়েছে ডরিভালের?
এই চিন্তাধারা অব্যাহত থাকলেই কি কোপা জয় হতে পারে সেলেসাওদের,নাকি ভিন্ন চিন্তাও আছে কোচ ডরিভালের?
আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনির চেয়েও খুরধার ডরিভাল,কতটা সচেতন তার সামর্থ্য আর শক্তি সম্পর্কে, সবকিছু ফুটে ওঠে তার মাত্র দুই ম্যাচের টেকটিক্সে!
ডরিভালের প্রথম এসাইনমেন্ট দেখুন,
যেখানে তার ফরমেশন ৪-৩-৩! এই ফরমেনে ৪ জন ডিফেন্ডারের সাথে ৩ মিডফিল্ডার রেখেছেন,বাকি তিনজন ফ্রন্টলাইনে ফরওয়ার্ড! এই ফরমেশনে জেসুস-মার্টিনেল্লি-কিংবা রিচার্লিসন কাওকেই দরকার হয়নি ডরিভালের।
কেননা সবাই তার খেলেন ফ্রন্ট লাইনে নম্বর নাইন পজিশনে।
প্রথম হাফে ভিনি রদ্রিগো আর রাফিনহা দিয়েই চালিয়ে দিলেন ডরিভাল,হুট করেই খেলার যখন ১৯ মিনিট বাকি তখন রদ্রিগোর জায়গায় নামেন এন্দ্রিক।এই একটা চেঞ্জেই সেই ফরমেশন ৪-৩-৩ থেকে হয়ে যায় ৪-৩-২-১!
যেখানে নম্বর নাইন পজিশনে খেলেন এন্দ্রিক,যার কাজ গোল করা,এবং তিনি সেই গোল করলেন এবং দলকে ইংল্যান্ডের মাটিতে জেতালেন!তাও আবার যেখানে তাদের বেশ কিছু প্রধান খেলোয়াড় ছিলেন দলের বাহিরে।
ডরিভাল খুব ভালো করেই জানেন জাতীয় দলে এখনি শুরু থেকে ৯০ মিনিট ভালো করে খেলা কঠিন এন্দ্রিকের জন্য,আর বাকি যারা ফ্রন্ট লাইনে নম্বর নাইন পজিশনে খেলেন তারা কেহই জাতীয় দলে খুব বেশি কার্যকর হচ্ছেন না,তাই ডরিভালের এন্দ্রিককে নিয়ে ২০ মিনিটের চিন্তা।
ডরিভালের ট্যাকটিক্সে আসবো,তার আগে দেখে নিন এই ফরমেশনই দিনিজের ব্যর্থতার অন্যতম কারন কিভাবে ছিলো??
দিনিজের সর্বশেষ ম্যাচ ছিলো আর্জেন্টিনার বিপক্ষে,যেখানে তিনি খেলেছেন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে!
দলে ৫ জন ফরওয়ার্ড নিয়ে খেলেছেন,সেক্ষেত্রে মিডফিল্ড যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলোনা,তাই ফরওয়ার্ড বেশি থাকা শর্তেও পর্যাপ্ত ভালো বল পায়নি,কোনো গোলও করতে পারেনি।তাছাড়া মিডফিল্ডে আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকায় উলটো গোল হজম করেছিলো তারা।
দিনিজের এর আগের ম্যাচের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেটির আজব এক ফরমেশন! যেখানে তিনি মাঠ সাজিয়েছিলেন ৪-৪-২ ফরমেশনে
,অথচ তার এটাকিং মিডে দুই পাশেছিলো রাফিনহা আর মার্টেনেল্লী,অর্থাৎ চার মিড মনে হলেও মুলত চার ফরওয়ার্ড নিয়েই খেলেছিলেন দিনিজ! ফলাফল হিসেবে কলম্বিয়ার বিপক্ষেও হেরেছে তারা!
এর আগের ম্যাচে দিনিজের কাছে বেশ শক্তিশালী একাদশ ছিলো,খেলেছেন নেইমারও।ছন্দে থাকা উরুগুয়ের বিপক্ষে খুব একটা ভিন্ন চিন্তা করতে পারেননি দিনিজ,৪-২-৩-১ ফরমেশনে তার নম্বর নাইন জেসুস কোনো কাজেই আসেইনি,বরং হেরেছে উরুগুয়ের বিপক্ষে।
অর্থাৎ দিনিজের এই তিন ম্যাচেই একটি জিনিস স্পষ্ট যে তিনি কখনোই তার মিডফিল্ডে মিনিমাম তিনজন জেনুইন মিডফিল্ডার রাখেননি,যেখানে আধুনিক ফুটবলে ৪ জন মিডফিল্ডারও হরহামেশাই দেখা যায়! সেখানে ২ মিড নিয়েই বেশি খেলেছেন দিনিজ,আর তাতেই মুলত ডিফেন্স-মিড আর ফরওয়ার্ডের মধ্যে কানেকশনটা যথেষ্ট ছিলোনা।
ঠিক এখানেই এগিয়ে নতুন কোচ ডরিভাল জুনিয়র,
তার খেলা দুই ম্যাচেই তিনি মিডফিল্ডার রেখেছেন ৩ জন,এবং সেটিকে তিনি কমাননি।অর্থাৎ মিডফিল্ডারের পরিবর্তে তিনি মিডফিল্ডার ইন করিয়েছেন।
ডরিভালের খেলা সর্বশেষ এই ম্যাচটি দেখুন, স্পেনের বিপক্ষে খেলেছেন ৪-৩-৩ ফরমেশনে।
আর এখানে রদ্রিগো নয়,রাফিনহার পরিবর্তন হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন এন্দ্রিক,আর ফরমেশনে রদ্রিগো হয়ে গেলেন রাইট উইঙ্গার আর এন্দ্রিক নম্বর নাইন পজিশনে।কিছুক্ষনের জন্য এন্দ্রিককে ব্যাবহার করা,আর মিড ডিফেন্সের শক্তিটা বজায় রাখাই ডরিভালের প্রধান শক্তি।
প্রতিটি কোচেরই পছন্দের ফরমেশন থাকে,তবে কোন দলকে নিয়ে খেলছেন,প্রতিপক্ষ কেমন সেটির বিচারে ফরমেশন সাজানো সমিচীন,আর তাইতো ডরিভালের পছন্দের ফরমেশন থেকেও কিছু সময়ের জন্য বের হয়ে এসেছেন তিনি।আর দলের সামর্থ্য না বুঝেই মিডফিল্ডে দুর্বলতা রেখে দিনিজ ব্যার্থ হয়েছেন ব্রাজিল জাতীয় দলে টিকে থাকতে!
Written by Md Shariful Islam
Reporter
Sports times