অনেক দর্শক আছেন যারা লাল বলের খেলা কে তৃতীয় শ্রেনীর খেলা মনে করে, শেষের দশকে এসে অনেক খেলোয়াড়রাও যেনো দর্শক বনে গেছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষবারের মত টেস্ট খেলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। লাল বলের খেলা থেকে দূরে থাকতে চাওয়ায় তাকে রাখা হয়নি টেস্টের চুক্তিতেও। তবে হুট করেই টেস্ট দলে মুস্তাফিজের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে শুরু হয়েছে কানাঘুষা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট খেলবে চলতি মাসে। ঘরের মাঠে মুস্তাফিজের সাফল্য আর চোট জর্জরিত পেস বোলিং ইউনিটের ভাবনা থেকে নীতিনির্ধারকদের অনেকে মুস্তাফিজকে টেস্ট স্কোয়াডে চেয়েছিলেন। যদিও মুস্তাফিজকে ছাড়াই ঘোষণা করা হয়েছে প্রথম টেস্টের দল। কারণ, এনওসি নিয়ে তিনি এখন খেলছেন আইপিএল।
জৈব সুরক্ষার বলয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন জানিয়ে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরতি চেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। মূলত তিনি অনাগ্রহ জানিয়েছিলেন, সেই ভিত্তিতে মুস্তাফিজকে টেস্টের চুক্তিতে রাখা হয়নি পরপর দুই বছর। তবে এখন তাকে আবারও টেস্টে ফেরাতে চায় বিসিবি। মুস্তাফিজ আবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি বেছে বেছে খেলতে চান, অর্থাৎ টেস্ট খেলতে চান না। এ নিয়ে তারকা পেসারের ওপর ক্ষিপ্ত বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। আইপিএল খেলেও টেস্টের মতই ওয়ার্কলোড হচ্ছে মুস্তাফিজের, মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আইপিএলে কয়টা ম্যাচ খেলেন? ৬টাই ধরলাম। খালেদ, এবাদত, তাসকিন, শরিফুল দুই টেস্টের চার ইনিংসে হয়ত ৬০ ওভার করে বল করে। ওয়ার্কলোড তো একই হচ্ছে! আপনি কোথায় বেশি ওয়ার্কলোড নিচ্ছেন? আপনি তো আইপিএলই বেশি খেলেন, আর তো কিছু বেশি খেলেন না। যুক্তির কথায় যদি আসি, ওয়ার্কলোড কোথায় বেশি আসে? আপনি আইপিএল খেলতে যাবেন, যেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। আপনি বিসিবির অধীনে খেলেন, দেশের খেলায় মনোযোগ দিতে হবে।’
ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাট ধরা হয় টেস্টকে। সেই টেস্টেই মুস্তাফিজের অনাগ্রহ থাকায় বেজায় নাখোশ সাবেক এই অধিনায়ক। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি প্রতি মুস্তাফিজের অনুরাগও স্পষ্ট। সুজনের ভাষ্য, ‘টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা… এখানে কী পাবেন আসলে? ৪ ওভারে ৪০ রান দিবেন একদিন, ৪ ওভারে ২০ রান দিবেন একদিন ৩ উইকেট পাবেন… টেস্ট দিয়েই তো ক্রিকেট শুরু হয়েছে।’
মুস্তাফিজের প্রতি তাই সুজনের আহ্বান- টাকার চেয়েও দেশ বড়। বর্তমানে ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পান। সাবেক ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে টাকা অঙ্ক ছিল নগণ্য। সেদিকে ইঙ্গিত করে দেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয় এই সংগঠক ও কোচ বলেন, ‘সাদা বলে হয়ত টাকার ব্যাপারটা বেশি। আইপিএল খেললে হয়ত ২-৪ কোটি টাকা পাব। ক্রিকেট কি টাকার চেয়ে বড় নয়? দেশ কি টাকার চেয়ে বড় নয়? আমরা তো টাকার জন্য খেলিনি। একজন ক্রিকেটারকে এখন মৃত্যুর সময় বিসিবির সহায়তা লাগে। ওদের তো লাগবে না। ওরা বরং অন্যদের সহায়তা করতে পারে। দেশের জন্য কেন আমি খেলব না?’
মুস্তাফিজের টেস্টকে ‘না’ বলার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে ক্ষিপ্ত সুজন আরও বলেন, ‘মুস্তাফিজের আসলে বয়স কত? কয়দিন ধরে খেলে? ও তো সাকিব না, তামিম না, মাশরাফি বা মুশফিক না, যারা এত বছর ধরে বাংলাদেশকে তিন ফরম্যাটে সার্ভিস দিয়েছে। দেশের জন্য খেলা জরুরী। আর টেস্টের মত বুনিয়াদি ক্রিকেট তো আর কিছুই হতে পারে না। আলোর ঝলকানি, টাকাপয়সা হয়ত সাদা বলের ক্রিকেটে বেশি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেট তো বনেদি খেলা। ক্রিকেট শুরু হয়েছে টেস্ট দিয়ে। মুস্তাফিজ কেন খেলতে চায় না আমি জানি না।’