তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের টেস্ট দলের দায়িত্ব দেয়া সাকিবের শুরুর চ্যালেঞ্জটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে। যেখানে জমে আছে বাংলাদেশের ব্যর্থতার একগাঁদা গল্প। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস ইউনিটের সঙ্গে বাউন্সি উইকেট, বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য রীতিমতো দুঃসহ স্মৃতি। টাইগার শিবিরে এখনও টগবগ করছে সর্বশেষ ২০১৮ সালে মাত্র ৪৩ রানে থমকে যাওয়ার মতো ঘটনা। সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে করতে না চাইলেও অন্তত ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের শুরুটাই সেই অ্যান্টিগা দিয়েই।
শুধু অ্যান্টিগা নয়, বাংলাদেশের চিন্তার কারণ হতে পারে সর্বশেষ সাউথ আফ্রিকা সফরে ৫৩ ও ৮০ রানে অল আউট হওয়ার ঘটনাও। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ কতটা দূর্বল সেটা অন্তত নতুন করে বলে দেবার নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও ব্যতিক্রম কিছু নেই। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ জয়। সেটিও প্রায় এক যুগ আগে, ২০০৯ সালে। সেবার বাংলাদেশের নেতৃত্বে ছিলেন ২২ বছর বয়সী সাকিব।
সেই টেস্ট সিরিজ জয় থেকে নতুন উদ্যেমে নামার প্রেরণা নিতে চাইলে বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলে দিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টাইগারদের ৫ টেস্ট হার। যেখানে দুটি ইনিংস ব্যবধানে আর একটি হেরেছিল ১০ উইকেটে। তবে অধিনায়ক সাকিবের অধীনে আরও একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, তাতে আশায় বুক বাঁধছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। যদিও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। নিজেদের শেষ দুই টেস্ট সিরিজের দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে রয়েছে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার মতো বড় সমস্যাও। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে সবাইকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ দেখছেন সাকিব।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে সাকিব বলেন, ‘ফিটনেস অনুযায়ী আমি ভালো অবস্থায় আছি। ফর্ম নিয়ে ভাবছি না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো একটা ম্যাচ গেছে আমার। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুব একটা ভাবছি না। দলীয় পারফরম্যান্স নিয়েই ভাবছি। টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ভালো খেলিনি। এখন সুযোগ সবাইকে ভুল প্রমাণ করার। আমরা আসলেই ভালো করতে পারি। এখান থেকে সামনে যেতে পারি। এ ম্যাচে ভালো করতে পারলে সিরিজের জন্য ভালো শুরু হবে।’
সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে টপ অর্ডার ব্যাটারদের অধারাবাহিকতা। সাউথ আফ্রিকার পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজেও নিজেদের ঠিকঠাক মেলে ধরতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটাররা। খানিকটা ব্যতিক্রম ছিল কেবলই চট্টগ্রাম টেস্ট। সেটিও তামিম ইকবাল-মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্ষেত্রে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারেন তিনে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত ও চারে খেলা মুমিনুল।
সর্বশেষ ৫ টেস্টের ৯ ইনিংসে ব্যাটিং করলেও পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস নেই শান্তর। মুমিনুলের অবস্থা আরও বাজে। সর্বশেষ ১১ ইনিংসে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। এমনকি এই সময়টায় মাত্র একবারই দুই অঙ্কের রান ছুঁতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক টেস্ট অধিনায়ক। তবে পাইপলাইনে কিংবা স্কোয়াডে যথেষ্ট ব্যাকআপ না থাকায় অনুমেয়ভাবে অ্যান্টিগায় শান্ত-মুমিনুলকে নিয়ে আরও একবার বাজি ধরবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
স্কোয়াড ও সর্বশেষ কয়েক সিরিজের পরিসংখ্যানে অ্যান্টিগায় ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী জয়। সর্বশেষ ঢাকা টেস্টে ভালো করতে না পারলেও চট্টগ্রামে তামিমের সঙ্গে দেড়শ পেরোনো জুটি গড়ার সঙ্গে করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরিও। সর্বশেষ সাউথ আফ্রিকা সফরেও সেঞ্চুরি রয়েছে জয়ের। তাতেই এই তরুণকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন সাকিব।
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘জয় (মাহমুদুল) দক্ষিণ আফ্রিকায়, নিউজিল্যান্ডে ভালো করেছে। এটি আরেকটি চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। সে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য সত্যিই ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে।’
সর্বশেষ দুবছরে দল হিসেবে উন্নতি করতে না পারলেও আলাদা করে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের পেসাররা। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট থেকে সাউথ আফ্রিকা, বাংলাদেশের বাজির ঘোড়া ছিলেন পেসাররা। যেখানে টাইগারদের পেস ইউনিটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ-এবাদত হোসেন। সঙ্গী কখনও তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম আবারও কখনও আবু জায়েদ রাহি-খালেদ আহমেদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পেলেও দলের সেরা অস্ত্র তাসকিনকে পাচ্ছেন না অধিনায়ক সাকিব। ইনজুরিতে নেই শরিফুলও।
তাতে অ্যান্টিগায় পুরোনো মুস্তাফিজুর রহমানে সঙ্গে এবাদত-খালেদ কিংবা রেজাউর রহমান রাজাকে নিয়েই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ১৬ জুন বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় শুরু হচ্ছে দুই দলের সাদা পোশাকের লড়াই। বলে দুর্দান্ত গতি থাকলেও অ্যান্টিগায় রাজার খেলার সম্ভাবনা খানিকটা ক্ষীণ। তবে রাজাকে মনে ধরেছে সাকিবের।
সেই সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরায় বাড়তি স্বস্তি পাচ্ছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। সাকিব বলেন, ‘‘রাজা (রেজাউর রহমান) নতুন পেসার। তার দিকে তাকাতে পারি। আরও কয়েকজন খেলোয়াড় আছে। মিরাজ দলে ফিরেছে, এটা আমাদের জন্য বড় ইতিবাচক দিক।’